মধ্যপ্রাচ্যের নারীদের মতো বাংলাদেশি মেয়েরাও এখন পছন্দের পোশাকের সঙ্গে বেছে নিচ্ছেন হিজাব। বর্তমানে সব বয়সী মেয়েরাই যেকোনো উপলক্ষে জামার সঙ্গে পরছেন হিজাব। আগে জামার রঙয়ের মিল রেখে হিজাব কিনতো মেয়েরা। এখন হিজাবের সঙ্গে মানিয়ে জামা কিনছে তারা।
শনিবার রাজধানীর কর্ণফুলী গার্ডেন সিটিতে গিয়ে এই চিত্র দেখা গেছে। ক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এবারের ঈদের জন্য মেয়েদের ভিন্নধর্মী কামিজ কিংবা জামা চাইছেন যাতে হিজাবের সঙ্গে জামা মানানসই হয়।
কর্ণফুলী গার্ডেন্স সিটির ক্লাসিক আউটফিট দোকানের বিক্রয় কর্মকর্তা মো. রাসেদ জাগো নিউজকে বলেন, এখনো ঈদ বাজার জমেনি তবে মেয়েরা এসে কাপড়চোপড় দেখছে। ২-১ বছর আগেও মেয়েরা কামিজে অতিরিক্ত গলা থেকে হাটু পর্যন্ত কারুকাজ চাইতো। কিন্তু এখন তাদের রুচি বদলেছে। অধিকাংশ মেয়েই এখন হিজাব পরে, হিজাবের কারণে তাদের জামার অর্ধেকটা ঢেকে থাকে। একারণে একটু নিচে থেকে কাজ চায় তারা। মেয়েদের চাহিদা অনুযায়ী আমরা কিছু কামিজ এনেছি যেগুলোর কারুকাজ বুকের নিচে। এসব কামিজের বিক্রি বেশি হচ্ছে।
আরও পড়ুন: রোজায় ত্বক ভালো রাখতে যা করবেন
কর্ণফুলীতে জামা কিনতে গৃহিণী শিরীন জাহান জাগো নিউজকে বলেন, ঈদে নতুন পোশাক না হলে একটু খারাপ লাগে। তাই এবার আগেভাগেই নিজের ও সন্তানদের জন্য নতুন জামা কিনতে এসেছি। ছেলে-মেয়ে দুজনের জন্য ২ সেট করে কাপড় কিনেছি। আমার জন্য ৩টি হিজাব আর ২টি জামা কিনেছি। কিন্তু গত বছর যে পোশাক হাজার টাকায় কিনেছি, এবার সেই একই মানের পোশাকের দাম ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা বেশি দিয়ে আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে দ্বিগুণ দাম ধরা হচ্ছে।
দাম বেশি নেয়ার বিষয়ে সামান্তা ফ্যাশনসের কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম বলেন, বাজার অনুযায়ী কম লাভ রেখেই দাম নেয়া হচ্ছে। তবে পাইকারি বাজারে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে বলে অনেক কাপড় খুচরা বাজারে দাম বেড়েছে।
শ্যামলী আক্তার নামে আরেক ক্রেতা বলেন, শাড়ি, কামিজ যাই কিনি না কেন তার সঙ্গে হিজাব থাকেই। কেউ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের জন্য পড়ে, কেউ আবার ফ্যাশনের কারণে। আমি যেহেতু নিয়মিতই পরি তাই আগে হিজাব কিনেছি। হিজাবের সঙ্গে মিল রেখে জামা কিনেছি।
শনিবার সকালে রাজধানীর কর্ণফুলী গার্ডেন সিটিতে গিয়ে ঈদের কেনাকাটা তেমন জমজমাট ছিল না। তবে তৃতীয় তলায় মেয়েদের সালওয়ার-কামিজ ও জুতার দোকানগুলোতে সকাল সকাল ভিড় ছিল।
কর্ণফুলীর নিচতলায় রয়েছে শিশুদের পোশাক, উপহার সামগ্রী, হেয়ার ব্যান্ড, চুলের কলপ, কসমেটিকস পণ্যসামগ্রী ও টেইলার্স। ঈদ উপলক্ষে কসমেটিক্সের দোকানগুলোতে রাখা হয়েছে দেশি-বিদেশি মেহেদি। তবে এসব দোকানে তেমন কোনো ক্রেতা ছিল না। ঐশ্বর্য কসমেটিক্সের বিক্রয় কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, এখন বিক্রি কম। ঈদে কসমেটিক্স আর মেহেদি কেনা শুরু হয় ২৫ রোজার পর।
মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় পুরোটা জুড়েই শাড়ির দোকান। তবে ক্রেতা স্বাভাবিক দিনের মতোই। এসব দোকানে জাপানিজ সিল্ক, হাফ সিল্ক জামদানী, জর্জেট, কাতান, টাঙ্গাইলের শাড়ি পাওয়া যাচ্ছে। দাম সর্বনিম্ন ১ হাজার থেকে ৪৫ হাজার টাকা পর্যন্ত।
রাজকন্যা শাড়িজের বিক্রয় কর্মকর্তা জাকারিয়া জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের বিক্রি স্বাভাবিক। তবে ক্রেতারা এখনো ঈদের কেনাকাটা শুরু করেনি। তারা শাড়ি দেখছে, অনেকে আবার ঈদের পরে বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য শাড়ি কিনছে।
কর্ণফুলীর তৃতীয় তলায় শিশু ও মেয়েদের জামাকাপড়। দোকানগুলোতে মেয়েদের আনারকলি জামা ও গাউন বিক্রি হচ্ছে ১২০০ থেকে ৮০০০ টাকায়। ৪৫০ টাকা থেকে কটন ব্লক প্রিন্ট থ্রি পিস আর এম্বোডারি ১২০০ থেকে ৩০০০ পর্যন্ত। এগুলো সবই ফ্রি সাইজ এবং সেলাইবিহীন (আনস্টিচড)। ক্রেতারা নিজেদের ইচ্ছেমতো মাপ দিয়ে বানাতে পারবে। দোকানগুলোতে হিজাব বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ৮০০ টাকায়। তৃতীয় তলার ক্লাসিক আউটফিট, পুলক স্টাইল, লেডি কুইন ও দুবাই বোরকা বাজারে ছিল ক্রেতাদের ভিড়।
আরও পড়ুন: রোজায় সতেজ থাকবেন যেভাবে
মার্কেটের কেনাকাটার বিষয়ে নাজিমউদ্দিন নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, এখনো অনেকে মে মাসের বেতন-বোনাস না পাওয়ায় কেনাকাটা করছেন না। অনেকে মার্কেটের অবস্থা, দামের অবস্থা অবলোকন করছেন। সময়ও আরো অর্ধেক রয়েছে। হয়তো ২০-২২ রমজানের মধ্যে কেনাকাটা করার জন্য নেমে পড়তে পারেন।
কর্ণফুলীর চতুর্থ তলায় ফুড কোর্ট ও জুয়েলারির দোকানগুলো ক্রেতাশূন্য ছিল।